কেন সাহিত্য পড়ব

 সাহিত্যের উদ্দেশ্য কি অর্থাৎ কোন কারণে এই গল্প কবিতা প্রবন্ধ উপন্যাস লেখা হয় তার সঠিক উত্তর আজ অবধি কোনো সাহিত্যিক, দার্শনিক দিতে পারেননি। 

কোনো কোনো কবি বলেছেন কবিতার উদ্দেশ্য শুধু কবিতাই। কিন্তু সেখানেই আমাদের থেমে থাকলে তো চলে না। আমাদের ভাবতে হয়। কেন মানুষ কবিতা লেখে? কেন গল্প পড়ে? অনেকের কাছে বইপড়া একটা নেশার মত। লিটিল ম্যাগ বের করা একদল সাহিত্যিকের কাছে অনেকটা যুদ্ধ জয় করার আনন্দের কাছাকাছি। 

কিন্তু এই যে সাহিত্য তা লেখা ও পড়া হয় কেন তার কথা ভাবতে গিয়ে কিছু ব্যাপার মাথায় আসে।

এর যে একটা আর্থিক লাভ লোকসানের দিক আছে সেটা আসে লেখা , পড়া, ভালোলাগার পরে। তাই সেদিকে তাকানোর পূর্বে দেখতে হয় আগের কারণ গুলোকে।

মনোরঞ্জন। সাহিত্য পড়ে যেমন পাঠক আনন্দ পান। লেখকেরও মনের ভার লাঘব হয়। প্রতিটা সৃষ্টিই আসে কিছু যন্ত্রণার বিনিময়ে। টুক করে কোনো সৃষ্টিশীল কাজ হয় না। তার অল্প হলেও প্রস্তুতি লাগে। তাই একটা লেখা লেখার আগে লেখককে এই প্রস্তুতি পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাকে ভাবতে হয় কি লিখব, কেনই'বা লিখব। তারপর শিশুর মত জন্ম নেয় একটা কবিতা, গল্প এমনকি প্রবন্ধও।


পাঠকের হাতে সেই সাহিত্যকর্ম পৌঁছাবার পরে তাকেও তা ধারণ করতে হয়। এই ধারণ করার ফলে অনেক সময় অনেক গতানুগতিক চিন্তা, অনেক নিশ্চল ধারণা ভেঙে যায়। যে জীবন পাঠক যাপন করেন না তার স্বাদ তিনি এই সাহিত্য থেকেই আহরণ করেন। ভাবনা চিন্তা পুষ্টি লাভ করে। মনের আরাম বা মনোরঞ্জন হয়।

কিন্তু এখানেই কি শেষ?

এর বাইরে সাহিত্যের ও সাহিত্যিকের কোনো কর্তব্য নেই?


মানব সভ্যতার জন্মের পর থেকেই মানুষ এগিয়ে চলেছে আধুনিকতার দিকে। আগুন আবিষ্কার, চাকা আবিষ্কার, লোহা আবিষ্কার হয়েছে। মানুষ আরও এগিয়েছে। আরো শিখেছে। আর তার ফল আজকের যন্ত্র সভ্যতা। আমরা গতকাল যা আবিষ্কার করেছি তা আজকে পুনরুদ্ভাবন করতে হয়না। উত্তরাধিকার সূত্রে সেই সভ্যতাকে বহন করে চলি। তা লিপিবদ্ধ হয়। তা আরও উন্নত হয়। ইংরেজিতে একটা কথা আছে। 

Reinventing the wheel

যা একই কাজ পুনরায় করে সময় ও শ্রমের অপচয় বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।

আমরা ইতিহাস রচনা করি, ভূগোলের হিসেব নিকেশ লিপিবদ্ধ করি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তা থেকে শিক্ষিত হয়। যাতে তাদের আর একই ব্যাপারে মাথা গলাতে না হয়।

কিন্তু কেমন ভাবে বেঁচে থাকা যায় তা নিয়ে কারোর কোনো মাথাব্যাথা থাকেনা। 

কেমন ভাবে ভালোবাসতে হয়। কেমন ভাবে খুব কঠিন অবস্হায় নিশ্চল থাকতে হয়। কেমন ভাবে গভীর দুঃখ জয় করতে হয়। কিভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে বা ভাঙতে হয়। অবকাশে কেমনভাবে আনন্দে যাপন করতে হয় সে শিক্ষা আমরা পাইনা। আমাদের নতুন করে নিজে থেকে আবিষ্কার করে শিখে নিতে হয় বারংবার। প্রতি প্রজন্মে।

মানুষকে এসব শেখানোর দায়িত্ব সাহিত্যের। সাহিত্যিকের। 

বড় বড় লেখকেরা তাই বাঁচার গল্প শুনিয়েছেন। তাঁরা কিভাবে বেঁচে আছেন কিভাবে বাঁচতে দেখেছেন তাই জানিয়েছেন।

আমাদের সমবেত প্রয়াসে , সাহিত্য সভায়, পত্রিকায় সেই বেঁচে থাকার গল্প যেন শোনা যায়। তার শ্রীবৃদ্ধি হয় এই কামনা করি।


(পশ্চিমবঙ্গ গনতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের পলাশী শাখার বৈকালিক আড্ডায় আমার এই ছোট্ট লেখাটা পাঠ করা হয়েছিল।)



মন্তব্যসমূহ