পরিমল ভট্টাচার্য ও আমরা (দ্বিতীয় পর্ব)

গত ২৫ জুন ২০২৪ আমি আর আমার বন্ধু অরিন্দম চন্দ দেখা করেছিলাম এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক পরিমল ভট্টাচার্যর সঙ্গে। প্রায় দু ঘণ্টা ধরে আমরা গল্প করি। আমাদের মনে পরিমল ভট্টাচার্য ও তাঁর লেখালিখি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল। সেগুলো তাঁর কাছে জানতে চাইলে পরিমলবাবু খোলা মনে গল্পের ছলে আমাদের উত্তর দেন। যাঁরা পরিমল ভট্টাচার্য্যের লেখা পড়েন বা যাঁরা এখনও পড়েননি তাদের সবার সেই কথাগুলো জানা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করেছিলাম। কোনো ইন্টারভিউ নয়, শুধু আড্ডার নির্যাসটুকু। গত ৪ আগস্ট আমাদের কথোপকথনের প্রথম পর্ব প্রকাশ করি। এবং দ্বিতীয় পর্ব ড্রাফট করতে শুরু করি। ইতিমধ্যে রাজ্যে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নাগরিক সমাজ উত্তাল হয়ে ওঠে আন্দোলনে। আমরাও তার অংশীদার হই। “যন্ত্রণার উত্তরাধিকার” বইতে পরিমল বাবু লিখেছেন জার্মান চিন্তাবিদ থিওডোর অ্যাডর্নোরর কথা। আউশুভিৎস্ এর মতো ইহুদি বন্দি শিবিরের নারকীয়তা প্রকাশ্যে আসার পর যিনি বলেছিলেন - “আউশুভিৎস্ এর পর আর কবিতা নয়”। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন এই সীমাহীন নিষ্ঠুরতা আর অশুভের জন্ম দিতে পারে যে জীব তার সৌন্দর্য সৃষ্টির অধিকার নেই। চূড়ান্ত ক্রোধ আর হতাশায় আমরা ডুবে গিয়েছিলাম। কিন্তু কবিতা থামেনি। কবিতা প্রতিবাদে প্রতিরোধে তার নতুন ভাষা পেয়েছে। ধীরে ধীরে আমাদের মনে হয় পরিমলবাবুর বলা কথাগুলো এই সময়ে দারুণ প্রাসঙ্গিক। তাই আমরা এই আলোচনার পরবর্তী পর্বগুলো প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিই। এই দ্বিতীয় পর্বে আমরা কেবল তিনটি প্রশ্ন আর তার উত্তরে পরিমল ভট্টাচার্য যা বললেন তা প্রকাশ করলাম। লেখক ও ব্যক্তি পরিমল ভট্টাচার্যকে বুঝতে যা অনেকটাই সাহায্য করবে। পরবর্তী পর্বে আমরা তাঁর লেখালিখি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করব।


কিছুদিন আগেই আপনি বিদেশ গেলেন। বেশ কিছু দেশ ঘুরলেন। সেখানকার পরিবেশ, সাধারণ মানুষ আর আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ বা বিশেষ করে আমাদের বাংলার সাধারণ মানুষ, যাদের আপনি কাছ থেকে দেখেছেন, যাদের কথা লিখেছেন , তাদের মধ্যে  কী কী মিল বা পার্থক্য আপনি দেখতে পান?


এখানে , বিশেষ করে বাংলার মধ্যে আমি যে ঘোরাঘুরিগুলো করি, সেখানে তো আমি একটা জনসমাজের মধ্যে রাস্তাঘাটে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ঘুরি। মানুষের সঙ্গে সারাক্ষণ ইন্টারেক্ট করছি। চায়ের দোকানে বসে, এমনিই যাকে বলে হ্যাজানো। বকবক করছি, মানুষ ওপেন আপ করছেন। এখানে আমি জলের মধ্যে মাছের মত। কিন্তু বিদেশে, ইউরোপের দেশগুলোতে আমি গেছি একজন টুরিস্ট হিসেবে বা কোন কোন জায়গায় আমন্ত্রিত হয়ে। সেখানে একটা ভাষার সমস্যা আছে। যদিও তা খুব বড় কিছু নয়, তবু এভাবে তুলনা করা যায় না।

তবে আমার মনে হয় মানুষ বোধহয় সব জায়গাতেই কমবেশি একই রকম। কিছু হ্যাবিটস আলাদা , তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। মানুষের ভেতরের যে চাহিদা গুলো , যে প্যাশন গুলো, যে  ফ্রাস্ট্রেশন গুলো, সেগুলোতে খুব বেশি তফাত আছে বলে আমি মনে করি না। 


সভ্যতাকে আপনি কীভাবে দেখেন? একটা উদাহরণ দিয়ে বলি - আমার যেখানে বাড়ি সেটা একটা গ্রাম বলা যায়। একসময় সেখানে অনেক গাছপালা ছিল। জায়গাটা সেভাবে জনমানুষে পূর্ণ হয়নি। কিন্তু এখন সেখানে অনেক নতুন বাড়ি তৈরি হয়েছে, বড় বড় বাড়ি। শপিংমল তৈরি হয়েছে। আরো গ্রামের দিকের মানুষেরা সেখানে আসছেন আর আমরা যারা ওখানকার মানুষ , তারা আরও শহরের দিকে আসার চেষ্টা করছি। সব সময় শহরকে নকল করার টেন্ডেন্সি আমরা দেখছি। ভিড় বাড়ছে, দূষণ বাড়ছে, প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় হচ্ছে। কিন্তু একেই আমরা উন্নতি বলছি, একেই সভ্যতা বলছি। কিন্তু সভ্যতার একটা সর্বগ্রাসী রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। হয়তো এর শুরুটা একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই হয়েছিল, কিন্তু দেখা গেল যে এর একটা সাইড-ইফেক্ট আছে। সেই সাইড-ইফেক্ট কে ঢাকতে এমন একটা ডেভেলপমেন্ট হলো তারও একটা সাইড-ইফেক্ট হল। এভাবেই একটার পর একটা সাইড এফেক্ট হচ্ছে, যাতে কতটা উপকার হচ্ছে জানিনা কিন্তু বেশ কিছু ক্ষতি চোখের সামনে আসছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখেন? আপনার কি মনে হয় না যে সভ্যতা ব্যাপারটা ঠিক এমন না হলেও চলত?

 

অবশ্যই। এটা একটা খুব বড় বিষয়। যাকে আমরা তথাকথিত সভ্যতা বলছি.. 

আমার "সত্যি রূপকথা" বইতে আমি এই নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছি। 

উড়িষ্যার নিয়মগিরি অঞ্চলের আদিবাসীরা একটা লড়াই শুরু করেছিলেন। সে লড়াই এখনো চলছে। একটা কোম্পানি সেখানে খনি তৈরি করার চেষ্টা করছিল, ইকো সিস্টেম ধ্বংস হওয়ার প্রবল সম্ভবনা ছিল। সেখানেই এই প্রশ্নটা বারবার এসেছে যে সভ্য কারা, সভ্যতা কি? 

সভ্য বলতে আমরা বুঝি শহরের নাগরিক শিক্ষিত মানুষ। সভ্যতা মানে যেন একটা লিনিয়ার প্রগ্রেস, শুধু এগিয়ে যাওয়া। আদিবাসী যারা জঙ্গলে রয়েছেন, যাঁরা এখনো সেই প্রাচীন জীবনধারা আঁকড়ে রয়েছেন, আমাদের ধারণা সেটা পিছিয়ে যাওয়া।

আরণ্যকে সত্যচরণের উপলব্ধির কথা বিভূতিভূষণ লিখেছেন, আমি ওখানে কোট করেছি। একদিকে মানুষ যন্ত্র সভ্যতায় অনেক এগিয়ে গেল। আর একটা গোষ্ঠী কেন সেই একই জায়গায় থেমে আছে? 

এই ভাবনাটাকে বলা হয় সোশ্যাল ইভলিউশনিজম। অর্থাৎ, সমাজ সব সময় এগোবে সামনের দিকে। এই ভাবনাটাকে রাজনীতিবিদরাও ব্যবহার করেন।  যেমন ধরো বিকশিত ভারত। "বিক্সিত ভারত" - যেমন মোদী বলেছেন। বিকাশ, উন্নয়ন। 

সারা পৃথিবীতেই এমন। যেন সবসময় ফরওয়ার্ড লুকিং। অর্থাৎ এখন যা আছি, আগামীকাল তার থেকে ভালো হবে। কিন্তু আসলে তা নয়। যদি সামগ্রিকভাবে দেখি, যদি প্রকৃতির দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে গত ষাট সত্তর বছরে পৃথিবীর প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পোকামাকড়ের প্রজাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। এবং আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে আরো প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ জীবের প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যেতে চলেছে।

একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। আমার ছোটবেলা, মানে আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে , তখন খুব লোডশেডিং হতো। আমরা ছাদে মাদুর পেতে বসতাম পড়া করতে, কেরোসিন ল্যাম্পের আলো জ্বালিয়ে। মাদুরের উপর জল ছিটালে একটা সুন্দর গন্ধ বের হতো। আর ল্যাম্পের কাছে একটু পরেই বিভিন্ন রকমের পোকা। আমরা সেগুলো নিয়ে খেলতাম পড়াশোনা না করে। এক ধরনের উচ্চিংড়ে ছিল, আমরা বলতাম হেলিকপ্টার পোকা। কালী পূজার সময় অগুনতি শ্যামাপোকা পাওয়া যেত। শহরেও ঝিঝি ডাকত, জোনাকি দেখা যেত। সেসব এখন কোথায়? এখন শুধু মশা আর মশা।

নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বছরকুড়ি আগেও টিউবলাইটের নিচে গাছের ডাল ঝোলানো থাকতো। দোকানে দোকানে পরের দিন সকালে শ্যামা পোকার স্তূপ জমে থাকত। হারিয়ে গেছে। 


ডোডো পাখিদের গান বইতে আপনি এই কথাগুলো লিখেছেন। খাবারের বৈচিত্র কমে যাচ্ছে। 


হ্যাঁ। বায়ো-ডাইভারসিটি কমে যাচ্ছে। আলু, কলা। সারা পৃথিবী জুড়ে এক ধরনের কেভেন্ডিস কলার রাজত্ব। আমাদের বাংলাতেই কত প্রজাতির ধান ছিল। সেটা নিয়ে এখন দেবল দেব গবেষণা করছেন। শুধু বাংলাতেই বোধহয় অন্তত কয়েকশো ধানের প্রজাতি ছিল।

এবং সেগুলো লোকালাইজড ছিল। এক একটা অঞ্চলে এক একটা বিশেষ প্রজাতির ধান পাওয়া যেত। এতে দেখা যেত যদি ক্লাইমেট চেঞ্জ হয়, বা অতিবৃষ্টি, খরা বা বন্যা হয়, তাহলে একটা প্রজাতি হয়তো কোনোক্রমে সারভাইভ করে যেত। অন্যগুলো হয়তো পারতো না, কিন্তু ওই একটা প্রজাতির জন্য মানুষের ফুড সিকিউরিটি থাকতো।

এখন একটা ইউনিফর্ম মোনোকালচার শুরু হয়েছে। পেস্টিসাইডের ব্যবহার বেড়েছে। কোন বিশেষ ধরনের ইনসেক্ট একটা বিশেষ ধরনের ধানের প্রজাতিকেই হয়তো আক্রমণ করে। তাকে  ঠেকাতে আরো বেশি করে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। 

একে কি আমরা সভ্যতা বলব , যেখানে এগিয়ে যাওয়া মানে আসলে ধ্বংস? এর থেকে থেমে থাকা ভালো।

আদিবাসী গ্রামে যারা থাকেন, যে জনজাতি, তাঁদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট প্রায় শূন্য। তাঁরা খুব একটা মুভ করেন না, অর্থাৎ তাঁরা ফসিল ফুয়েল পোড়ান না। তাঁরা বাইরের প্রায় কিছু কনজিউম করেন না। একটা সেলফ সাসটেইন্ড জীবনযাত্রার মধ্যে থাকেন। প্রকৃতির মধ্যে প্রকৃতির অংশ হয়েই থাকেন।


ভারতবর্ষে ব্রিটিশরা আসার পর যখন বড় আকারের দুর্ভিক্ষ শুরু হল, বিভিন্ন সময় তখন গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে। এই আদিবাসীরা কিন্তু টিকে ছিলেন। এই ধরনের দুর্ভিক্ষের পরে যখন গ্রামবাংলায় কৃষক কমে গেল, তখন ছোটনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের নিয়ে এসে এখানে বসানো হয়েছিল কৃষকের ঘাটতি পূরণ করার জন্য। তাই এখনো বাংলার গ্রামে কুলে পাড়া বা মাঝিপাড়া দেখা যায়। এঁদের অরিজিন কিন্তু বহু পুরনো। এঁরা এসেছেন সেই ব্রিটিশ আমলে বাংলার বিভিন্ন দুর্ভিক্ষের সময়। তাঁরা বেঁচে ছিলেন। তাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। অন্য সিস্টেমের উপর নির্ভরতা তেমন ছিল না।

তাহলে আমরা কাকে সভ্য বলব? 


আদিবাসী বলতে আমরা যে সিঙ্গেল মনোলিথিক ব্যাপার বুঝি, তা তো নয়; কেবলমাত্র উড়িষ্যাতে ২২ কি ২৩ ধরনের আদিবাসী জনজাতি আছে। আলাদা আলাদা তাঁদের ধরণ। তুলনামূলকভাবে সাঁওতালরা তাড়াতাড়ি "আধুনিকতাকে" এডপ্ট করেছেন। তাই  এস টি কোটায় সাঁওতালদের বেশি দেখা যায়। কিন্তু কোল, ভিল, মুন্ডা দের সেভাবে দেখি না।

কিন্তু এঁদের মধ্যে কিছু একই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এবং আদিবাসী সমাজে প্রস্টিটিউশন নেই। অপরাধ প্রবৃত্তি সেভাবে নেই, চুরি নেই। সবাই একই রকম ভাবে জীবন ধারণ করে, সবার কাছে একই রকম জিনিস থাকে। কে কার কীচুরি করবে?


কিন্তু লোধাদের মধ্যে চুরির প্রবৃত্তি তো দেখা যায় বলে শুনেছি?


সে তো ব্রিটিশরা ওঁদের অপরাধপ্রবণ জাতি বলে দেগে দিয়েছিল। ওদের বাগে আনতে না পারার জন্য  এমন ব্র্যান্ডিং করে দেওয়া। আসলে তো তা নয়। এই নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। মহাশ্বেতা দেবী এবং অন্যান্যরাও লিখেছেন। এখন সে তকমা উঠেও গেছে। এবার তাঁদের যদি হ্যাবিটেড কেড়ে নেয়া হয়, জমি কেড়ে নেয়া হয়, তখন তো পেটি ক্রাইমের দিকে ঝুঁকবেই। এবং যেটা হয়, আরবানাইজেশনের জন্য জীবনধারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে অপরাধ প্রবণতা জাগতে পারে।


আপনি বললেন যে প্রাথমিকভাবে ইংরেজি উপন্যাস লিখে আপনি শুরু করেছিলেন। এখন আপনি বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাতেই লিখছেন। বাংলায় লেখা এবং ইংরেজিতে লেখা, টার্গেট অডিয়েন্সের পার্থক্যের কারণে লেখার ধরনের কি অনেক পরিবর্তন করতে হয়? বাংলায় কি আপনি অনেক স্বতস্ফূর্ত ভাবে লেখেন?


এই ব্যাপারটা একটু গোলমেলে। আমি বাবামায়ের একটু বেশি বয়সের সন্তান। দাদারা বয়সে আমার থেকে অনেকটাই বড় ছিল। ছোটবেলায় যে সময়টা মানুষ পড়াশোনা করে শাসনে থাকে, সে সময় আমি পাড়া বেড়িয়ে বেড়াতাম। প্রচন্ড ডানপিটে ছিলাম, রাবারের টিউব নিয়ে গঙ্গায় সাঁতার কাটতে যেতাম। যে বয়সে একজনের শিশু সাহিত্য, ভূতের গল্প পড়ার কথা সে সময় আমি ডানপিটামি করেই কাটাতাম। এটা এক প্রকার অভিশাপই বলা যায়। তখন পড়াশোনা করিনি বলে বাকি জীবনটা আমাকে বই আর খাতার মধ্যে মুখ গুঁজে থাকতে হচ্ছে।


আমার দাদারা অনেক ইংরেজি থ্রিলার পড়তেন। জেমস হেডলি চেজ, অ্যালিস্টার ম্যাকলিন। দিল্লি, মীরাট অঞ্চলে দাদা কাজ করতেন। মাঝে মাঝেই টুরে যেতে হলে বই কিনতেন। এসব বইয়ের কভার গুলো ছিল খুব কালারফুল, ঝকমকে, বন্দুক রক্ত.. খুব আকর্ষণীয় ছিল। তখন থেকেই আমি ইংরেজি বইয়ের দিকে একটু করে ঝুঁকতে থাকি। যদিও তখন এদেরই কাঁচা বাংলা ভার্সন আশি পয়সার স্বপন কুমার পড়তে শুরু করেছি। বেশ রগরগে গল্প সেসব। সেই বয়সে ভালোও লাগত। কিছু বুঝতাম, কিছু বোঝা যেত না কিন্তু গল্পের টানে পড়ে ফেলতাম। এভাবেই আস্তে আস্তে ইংরেজি পড়ার একটা টেস্ট তৈরি হয়। ইংরেজি আর অংকে বেশ ভালোই ছিলাম। তারপর যখন হায়ার সেকেন্ডারি  পড়ছি তখন বন্ধু কবি লেখকদের সংস্পর্শে এলাম। তারা খুব পড়তো আর তাদের দেখাদেখি আমিও আরো নানা ধরনের সাহিত্য, গদ্য, কবিতা পড়া শুরু করি। সেই সময় সদ্য যৌবন আসছে, নিজের ভেতরেও একটা ছমছমে রিচ কল্পনার জগত। এলিয়ট, শেলী, কিটস পড়তে লাগলাম। সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিলাম। আমার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। দাদারা সব সাইন্সের, বাবাও বলেছিলেন সাইন্স নিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু তখন আমার এলিয়ট পড়তে ভালো লাগছে। ব্যোদলেয়ার পড়তে ভালো লাগছে। কিছুদিন পর মনে হলো না, সাহিত্যই পড়ব। ইংরেজি তে অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম। অর্থাৎ আমার সাহিত্য পাঠ বেশিরভাগই ইংরেজিতে। বাংলা সে অর্থে আমি খুব একটা বেশি পড়িনি। এবং এখনও যখন আমি কোন লেখার ভাবনা চিন্তা করি বা পয়েন্টস নিই, তখন সেগুলো ইংরেজিতেই লিখি। ইংরেজি ভাবনাটা আমার কাছে সহজে আসে। আর আগে যেমন বলেছি , আমি একসময় ভাবতাম আমি যে ধরনের লেখা লিখতে চাই তেমন লেখা বাংলার পাঠকের হয়তো গ্রহণ করবেন না। টেলিগ্রাফে আমি একটা সময় ধারাবাহিকভাবে কলাম লিখতাম।

যদিও দার্জিলিং বইটা আমি বাংলাতেই লিখি। বাংলা বইটা পড়ার পর অনেকে বললেন যে এটাকে ইংরেজিতে লেখো। সেটা আমার কাছে খুব একটা কঠিন মনে হল না। 

ইনফ্যাক্ট অনেকেই বলেন, সত্যমিথ্যা জানিনা, যে বাংলার থেকে আমার ইংরেজি লেখা ভালো হয়। বাংলা অনেক ছড়ানো, কিন্তু ইংরেজিটা অনেক টানটান, বলিষ্ঠ। এই ব্যাপারটা পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন। আমার কাছে বাংলা ইংরেজি খুব একটা আলাদা কিছু নয়। ইনফ্যাক্ট এখন যে লেখাটা লিখছি, অনুষ্টুপে কিছুটা বেরিয়েছে। ওটা আমি ইংরেজিতেই রাফ করেছি। পরে লেখাটাকে ইংরেজিতে বের করতেই পারি।





                                                                                                ( চলবে ....)



                                                                



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পরিমল ভট্টাচার্য ও আমরা (প্রথম পর্ব)

কোরকের কথা