ছবি
ছবি
আঁকাবাঁকা ছোট্ট একটা নদী, টলটলে আকাশী রঙের জল তার। নদীটার উপরে একটা নৌকা ভাসে। কখনো কখনো পাল তুলে কখনো এমনিই। নদীর পারে গাছের ছায়ায় একটা কুঁড়েঘর। সেই ঘর থেকে একটা সরু পথ মিশেছে নদীতে আর দূরে আকাশে এক ঝাঁক পাখি উড়ছে সার দিয়ে। অথবা দুটো পাহাড় , পাহাড় দুটোর আড়ালে সূর্য ডুবছে। পাহাড় দুটোর সবুজ বিছানো উপত্যকায় কয়েকটা গাছপালা নিয়ে একটা বাড়ি আর বাড়িটার ঠিক দরজা থেকে একটা রাস্তা এঁকে বেঁকে চওড়া হতে হতে আঁকার খাতার কিনারায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এই ছিল ছবি। এই ছবিই বারবার এঁকেছি। আঁকার পরীক্ষা থেকে প্রতিযোগিতা যেটুকু ছবি আঁকা জানতাম তার দৌড় শেষ হতো এই দুই ছবিতেই। একবার এক প্রতিযোগিতায় ছবির বিষয় হলো বন্যা। আঁকার স্কুলের সবার সাথে আমারও নাম ছিল। সেদিন আমার ছবির ছোট্ট নদী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো , ফুঁসে উঠলো জল। তার সে আকাশী রং আর রইলোনা। গাছপালার ছায়ায় থাকা কুঁড়েঘরটা ডুবুডুবু হলো সেই পাগলা নদীর ঘোলাটে জলে। পাখিগুলো উড়লো'না আকাশে। কিন্তু এতদিন যাদের দেখা যায়নি, যাদের আমি ঘরের চার দেওয়ালের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আড়াল করে রেখেছিলাম তারা দুজন উঠেএলো কুঁড়েঘরের চালায়। চোখ আঁকতে আমি জানিনা ভাগ্যি। জানলে ওদের অসহায় , করুণ দৃষ্টিকে সহ্য করতে পারতামনা।
বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় নাম দিইনি আর। আঁকার স্কুল ছেড়ে ছিলাম কিছুদিন পরেই। তারপর নিশ্চয় জল নেমে গিয়েছে। আমার আঁকা ছোট্ট নদী আবার শান্ত হয়েছে , মানুষদুটো আবার ফিরেছে ঘরের ভিতরে। পাখিগুলোও নিশ্চয় আবার উড়েছে আগের মতো। সে ছবি আমি আঁকিনি কিন্তু জানি দুই পাহাড়ের আড়ালে এখনো সূর্য ডোবে । পাকদন্ডী ধরে হেঁটেহেঁটে কেউ ঠিক পৌঁছে যায় বাড়ির দরজায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন