পোস্টগুলি

মার্চ, ২০২৩ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বাংলায় বর্গী হানা ও পলাশীর কিছু পুরনো কথা

ছবি
এ ইতিহাস পলাশীর যুদ্ধের থেকেও প্রাচীন। বাংলার মসনদে তখন সিরাজের দাদু আলীবর্দী খান।  নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান রঘুনন্দন মিত্র চলেছেন মুর্শিদাবাদ দরবারে। সঙ্গে কয়েক লক্ষ টাকা; নানা উপঢৌকন। নবাবের কাছে বার্ষিক খাজনা দিতে হবে। বিন্দুমাত্র দেরি হওয়ার জো নেই। ঠিক সময়ে না পৌঁছালে বড়সর বিপত্তি। প্রজাপালক হিসাবে অলিবর্দীর খুব নামডাক কিন্তু শাসক হিসাবে তিনি কড়া। একটু বেশিই কড়া। খাজনা দিতে দেরি হলে বা দেয় খাজনায় কোনোরকম অসঙ্গতি থাকলে নির্মম ভাবে হত্যা করতে তাঁর হাত কাঁপে না। অত্যাচারের বিভিন্ন পন্থা আছে। আম জনতার সামনে চরম হেনস্থা করে বিষ্ঠার পুকুরে ডুবিয়ে মারা হয়।  যদিও রঘুনন্দন আঁটঘাট বেঁধে, পর্যাপ্ত সময় নিয়েই বেড়িয়েছেন কিন্তু পথের কথা কে বলতে পারে। নদীয়ার গ্রামের পর গ্রাম পার হয়ে মুর্শিদাবাদের প্রায় উপকণ্ঠে পৌঁছেছেন তিনি। এবারে পার করবেন নদীয়ার শেষ গ্রাম পলাশী। রঘুনন্দন কিছুটা নিশ্চিন্ত। মুর্শিদাবাদ জেলায় ঢোকার পরে নবাব-দরবারে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।  এমন সময় দূরে দেখা গেল কালো মেঘের মত একদল অশ্বারোহী। শ্রান্ত সৈনিকেরা নড়ে চড়ে উঠল। কিন্ত তারা বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার...
ইতিহাসের গল্প

একটি যাচ্ছেতাই গুল্প

ছবি
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হলো আজকের দিনটা নষ্ট হয়ে যাবে যদি একটা ভালো গল্প পড়তে না পাই। এভাবে শুরুতেই দিনের উপর একটা সিদ্ধান্ত দেগে দিতে খারাপই লাগল কিন্তু কিছুতেই মন থেকে চিন্তাটা বের করতে পারলাম না। বই আমি অনেকই পড়ি কিন্তু আমার কাছে বই তেমন থাকে না। আজকাল বইয়ের যা দাম, আমার তুচ্ছ পকেট মানিতে তা কুলোয় না। যাও বা একটা অধটা কিনে ফেলি তা ঠিক কারোর না কারোর পছন্দ হয়ে যায়। তারপর বই ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়ার সেই পুরোনো প্রথার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে। আজকাল তাই দু একটা যা কিনে ফেলতে পারি তা কিনে কিনেই ফ্রিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখি। ফ্রিজটার শেষ থাকের নীচে সবজি রাখবার একটা প্লাস্টিকের মুখ খোলা বাক্স আছে। সে বাক্সে বাকি সবার বাড়িতে তরি-তরকারি থাকে। আমাদের বাড়িতে বই। সবজি আমি প্রতিদিন বাজার করে অনি। ফ্রেশ।  ফ্রিজে তিনটে বই ছিল। দুটো গল্পের। এবছরই বইমেলায় কেনা। তার একটা বের করে বালিশের নীচে রেখে দিলাম গরম হওয়ার জন্য। ততক্ষনে বাজারটা হয়ে যাবে। ২. বাজার করে ফেরার পথে হঠাৎ ধ্রুবর সাথে দেখা। দেখেই বলে - ভাই আমার একটা ছোট্ট কাজ করে দিবি? ধ্রুবর সব কাজই ছোট কাজ। হ্যাঁ, না'য়ের অপেক্ষা না করেই পকেট থ...
বানানো গল্প

ফুটপাথের দোকান - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

ছবি
গত দুচার বছরে পত্রভারতী প্রকাশনী থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নানা লেখা কুড়িয়ে বাড়িয়ে বেশ কয়েকটা বই প্রকাশিত হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া লেখা, সিন্দুক খুললেই চল্লিশ ইত্যাদি। ফুটপাতের দোকান সেই ধরনের বইগুলোর মধ্যে একটা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখার এক অমোঘ টান আছে। মিঠে শব্দের নিজস্ব অভিধান আর মন জুড়িয়ে দেওয়া বাক্যের একটা স্বতন্ত্র ব্যাকরণ যেন তাঁর হাতে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যারা ওনার লেখা পড়েছেন তাদের কাছে ব্যাপারটা কমন। এই বইটিও পড়তে তাই মন্দ লাগেনা। মনোহারী দোকানের হরেক জিনিসের পশরার মত নানা ধরনের লেখা দিয়ে এই বই সাজানো। কিন্তু অন্তত আমার কাছে কয়েকটি মাত্র লেখা বাদে আর কোনো লেখাতেই নতুনত্ব কিছু নেই। নতুনত্ব অর্থাৎ সেই সব কথা যা এখনও অবধি শীর্ষেন্দু তার কোনো রচনাতেই বলেননি। এমন হতেই পারে। সব লেখাতেই নতুন কিছু বলার থাকবে এমন আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু যে লেখক ট্যাংকিসাফের মত গল্প, ঘুণপোকার মত উপন্যাস লিখেছেন তাঁর কাছে পাঠকের আবদার একটু বেড়েই যায়। এই বইটিতে বিমল কর ও তাঁর সাহিত্য নিয়ে একটি সুন্দর প্রতিবেদন আছে। আর আছে চানাচুরতন্ত্র নামে একটি মুক্তগদ্য। আমার মত পাঠকের কাছে ...
বইপত্রের গল্প

লকডাউন

  ১ জানলার সামনে ঠিক দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে একটা বুড়ো পায়রা এসে বসে। তার পালকগুলো অগোছালো। কোথাও কোথাও উঠেও গিয়েছে। শীর্ণ দেহ। দেখে মনে হয় সে বহু যুদ্ধের ক্লান্ত সৈনিক। এতদিন খেয়াল করিনি। এ সময়ে অফিসে থাকি। শনি রবিবার সময়টা চলে যায় হয় ঘুম নাহলে খাওয়া অথবা কম্পিউটার ঘাঁটতে ঘাঁটতে। ফ্ল্যাটের ব্যালকনি তে দাঁড়ালে সারি দিয়ে দেখা যায় এই এলাকার অন্যান্য আবাসন গুলো। কখনো কখনো দেখি আমার মতোই বন্দী মানুষেরা গ্রিলের উপর হাত রেখে বড় উদাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। গরম পড়েছে। ভীষণ গরম। কিন্তু এদেশে তো বৈশাখ মাস নেই তাই কালবৈশাখী হয়না। সূর্য ডোবে দেরিতে। ছটার পর ছাদে উঠলে স্নেহ মমতা মেশানো হাওয়া বয়। ওখানেই আমাদের পিজির বাকি বোর্ডারদের সাথে গল্প, কখনো গান , বাড়ি থেকে অফিসের কাজ আর ভাইরাস নিয়ে আলোচনা। এ আলোচনা একসময় থেমেও যায়। ছাদের উঁচু কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে দূরে চেয়ে থাকে কয়েকজন । ছোট্ট স্পিকার এনে কখনো গান চালানো হয়। কেউ কেউ লোহার মই বয়ে জলের ট্যাঙ্কির কাছে পৌঁছে যায়। ছাদ জুড়ে চলতে থাকে পায়চারি। ঠিক এমন সময় লাল হতে হতে টুক করে সূর্য ডুবে যায়। অন্য দিকে জলছবির মতো আবছা উঁকি দেয় নিষ্প্রভ চাঁদ। এ এক প্রায় বিচ...
চিন্তার ব্যাপার জীবনের গল্প

ঠিক সিনেমার গল্প

  ১ কলকাতা থেকে শ দেড়েক কিলোমিটার দূরে NH - ৩৪ এর উপর এই গ্রাম। কাছেই স্টেশন আর মেন্ রাস্তার বাস স্টপেজ থাকায় আশেপাশের এলাকার থেকে একটু গমগমে। আবার ইতিহাসের পাতায় এই এলাকার নামও আছে। তবে বেড়ানোর জায়গা একে বলা যায়না। তেমন দ্রষ্টব্যঃ কিছু তো নেই। ইতিহাসে নাম থাকলেও সে ইতিহাস বড় সুখের নয়। তাই তাকে বাঁচারনোর তাগিদও কম। তবু শীতের শুরু থেকে বসন্তের শেষ অবধি এখানে পরিযায়ী মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। নদীয়া মুর্শিদাবাদ ভ্রমণের ফাঁকে যাদের হাতে কিছুটা বেশি সময় থাকে, তেমন কৌতূহলী মানুষেরা এখানে এক বেলা কাটিয়ে যায়। অন্য সময় কলকাতায় চাকরিজীবী যারা কালেভদ্রে দেশের বাড়ি দর্শন করতে আসতো তারাও প্রায় প্রতি সপ্তাহে একবার করে বাড়ি ফিরে আসে। আর আসে পিকনিক পার্টি। রীতিমতো গাড়ি ভাড়া করে , বাসন কোসন , বক্সস্পিকার এনে , রেঁধে বেড়ে , ব্যাটমিন্টন খেলে হৈ হুল্লোড় করতে। আমি এই এলাকারই ছেলে। মাস্টার ডিগ্রি পাশ দিয়ে এখন দু চারটে টিউশন করি। সারা দিনে চার পাঁচ ঘন্টা পড়ানোর পর অখণ্ড অবসর। তবে এই সময় আমার চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। বন্ধুরা কলকাতা থেকে ফিরলে দফায় দফায় তাদের সাথে চায়ের আড্ডা চলে। কখনো ঘুরতেও বেরোতে হয়। স...
বানানো গল্প

নীলা (১)

নীলাকে আমার ভালোলাগে। নীলাকে ভালোলাগে শুধু এই জন্যে নয় যে নীল রং আমার ভীষণ প্রিয় আর নীলার নামে সে রঙের রেশ পাওয়া যায়। বরং নীলাকে ভালোলাগার যে অকারণগুলো আছে এটি তার একটা। নীলাকে দেখলে আমি একটা সিগারেট ধরাই। সিগারেট আমি খাই না। পকেটে রাখি। নীলকে দেখলেই আমার নিজেকে খুবই হালকা লাগে। যে কেউ তখন আমাকে এক ফুঁ'য়ে উড়িয়ে দিতে পারে। দু আঙুলের ফাঁকে সিগারেট থাকলে পুরুষদের ব্যক্তিত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। তখন আর তাকে হেলাফেলা করা যায়না। আমি জানি নীলাও আমাকে দেখে। নিশ্চয় দেখে। নীল পাঞ্জাবি , হাতে জ্বলন্ত সিগারেট , গালে দিন চারেকের না কাটা দাড়ি, চোখে চৌকো কালো ফ্রেমের চশমা। এমন ছেলেকে সহজে এড়ানো যাই কি? আমি আয়নায় দেখেছি। বাহ বেশ বেশ লাগছে তো। নীলা নিশ্চয়ই দেখে। কিন্তু নীলার চোখের দিকে আমি আজও সরাসরি তাকাইনি। অঞ্জলি দেওয়ার সময় যখন নীলা চোখ বন্ধ করে ঠাকুরকে নম করে। তারপর ঠোঁট দুটো মৃদু কাঁপিয়ে নমস্তুতে বলে ফুল ছুঁড়ে দেয়। তখন আমি দেখেছি নীলার প্রতিটা অস্ফুট মন্ত্রোচ্চারণের সাথে সাথে আলিপুরের অকাল বর্ষণের পূর্বাভাস মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে। তারপর প্রসাদ বিতরণের সময় আসে। একেক করে সবার নাম ডেকে ভীষণ ব্যস্ত ব্যস্...
বানানো গল্প

মায়াচর

ছবি
 ১ . ছোটবেলায় ঠাকুমা যখন বেঁচে ছিল তখন আমাদের বাড়ি আত্মীয় স্বজনদের আনাগোনা ছিল খুব। তারা সবাই যে খুব নিকট আত্মীয় তা নয়। দূরসম্পর্কের আত্মীয়রাও নির্দ্বিধায় ঠাকুমার সাথে দেখা করতে আসত। এসে দু চারদিন থেকে যাওয়ারই নিয়ম ছিল। আজ এসে কাল চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক নজরে দেখাও হতো না। কেউ যেতেও দিত না। তখন মোবাইলের যুগ নয়। পাড়ার কোনো কোনো বড়লোকদের বাড়িতে হয়ত একটা ল্যান্ডফোন থাকত। তাতে লাইন পাওয়াও দুষ্কর ব্যাপার। যে সমস্ত অতিথিরা আসতেন তদের কেউ কেউ হয়ত আগে থেকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিতেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই চিঠি সঠিক সময়ে এসে পৌঁছাত না। তাই আমাদের কাছে তাদের আকস্মিক আগমনই ঘটত। এখন যুগ বদলেছে। অপ্রয়োজনে সহজে কেউ কারোর বাড়ি যায়না। গিয়ে থাকার তো প্রশ্নই নেই। আর যাওয়ার আগে তিথি নক্ষত্র জানিয়ে দেওয়াই বর্তমানের দস্তুর। এ ব্যাপারটা ভালোই। গৃহস্বামীকে বিব্রত হতে হয়না। দু চার ঘণ্টায় প্রয়োজনীয় আলাপচারিতা দিব্যি সেরে নেওয়া যায়। সেই ফাঁকে অল্প স্ন্যাকস। বড়জোর লাঞ্চ। তারপর সৌজন্য বিনিময় শেষে ঘরে ফেরার পালা। আমি আজকালকার এই নিয়মকে একটু নিজের মত ভেঙে নিয়েছি। কারোর সাথে দেখা করতে গেলে পারতপক্ষে তাকে জানাই না। হঠাৎ...
বানানো গল্প

বুদ্ধ এবং

ছবি
ভূপতিত ,আহত পাখিটাকে পরম স্নেহে হাতে তুলে নিলেন কুমার সিদ্ধার্থ তারপর সেবা শুশ্রূষায় তাকে সুস্থ করে তুললেন । সিদ্ধার্থের কোলে পাখিটাকে দেখার পর তীরন্দাজের দাবি- একে তীর মেরে নামিয়েছি আমি অতএব এ পাখি আমার। সিদ্ধার্থ বললেন তুমি পাখিটাকে মারতে চেয়েছিলে, যদি মারা যেত তবে মৃত পাখির উপর নিঃসন্দেহে তোমার অধিকার থাকতো কিন্তু আমি এর প্রাণ বাঁচিয়েছি তাই জীবিত পাখির উপর আমার অধিকার। এ যুক্তি খণ্ডাতে পারলেননা বিচারকও। হার হল তীরন্দাজ দেবদত্তের। গৌতম বুদ্ধের জীবনের সব থেকে আলোচিত ঘটনা বোধয় এটাই। আমরা আমাদের পাঠ্য বইয়েও পড়েছি। এই কাহিনীর শেষ কিন্তু এখানে হয়নি, বরং এ কাহিনী জন্ম দিয়েছিলো আজ থেকে প্রায় দুহাজার পাঁচশো বছর আগের এক সাম্রাজ্যের বিরাট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ।
ইতিহাসের গল্প

তক্কোগুলি, চরিতাবলী ও আখ্যানসমূহ (লেখক - কল্লোল )

ছবি
  আমার মনে হয় পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখতে গেলে নিজেকে বই , বইয়ের চরিত্র , লেখক ও ঘটনার থেকে একটু নিরোপেক্ষ আসনে বসাতে হয়। ধরুন একটা বই বেরুলো আর আপনি হামলে পড়লেন। আপনার প্রিয় লেখকের বই হতেই পারে। কিন্তু লেখা পড়ে হতাশ হলেন। প্রতিক্রিয়ায় তখন আপনার হতাশা ফুটে উঠবে মাত্রাতিরিক্ত। বইটা ভালো লেগে গেলে তেমনই মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছাস দেখা দেবে আপনার প্রতিক্রিয়ায়। এই আধিক্য কাম্য কখনোই নয় কিন্তু আবেগকে সামলাবেন কি করে? কোনো ক্লাস নিতে বসিনি। আসলে আজকের এই লেখাও আধিক্য দোষে দুষ্ট হতে পারে তাই আগে থেকে বলে রাখলুম আরকি। কল্লোল বাবুর "কারাগার বধ্যভূমি ও স্মৃতিকথকতা" আগেই পড়েছিলাম। কেমন লেগেছিলো তা এর আগে একটা পোস্টে জানিয়েছি। "তক্কোগুলি, চরিতাবলী ও আখ্যানসমূহ" তার পরবর্তী গ্রন্থ। এক্সপেক্টেশন ছিলো কিন্তু তবু এক্সপেক্টেশনজনিত আবেগচ্ছাস সরিয়ে রেখে পড়তে শুরু করে দেখলাম এক অন্য আবেগ এসে মিশে যাচ্ছে। গল্প শুনেছেন? দাদু ঠাকুমার মুখে গল্প , বন্ধুর মুখে তার জগৎ জয় করা কীর্তির গল্প বা কোনো দুঃখী মানুষের দুঃখের উপাখ্যান। পাতা উল্টে পড়তে হয়না , শুধু শুনে যেতে হয়। ভালো করে শুনলে দেখবেন চোখের সা...
বইপত্রের গল্প

কারাগার বধ্যভূমি ও স্মৃতিকথকতা (লেখক - কল্লোল)

ছবি
২০১৭ কলেজ স্কয়ার বই উৎসবে প্রথম যখন বইটা হাতে নিয়েছিলাম মনে হয়েছিল নকশাল আন্দোলন নিয়ে আবার একটা বই। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটা পড়েছি। কোনোটা পক্ষে কোনোটা বিপক্ষে। হাজার চুরাশির মা পড়া হয়ে গিয়েছে। "অন্তরঙ্গ চারু মজুমদার" নামের একটা বইতে চারুবাবু সম্পর্কেও কিছু জেনেছি। আবার রুনু গুহ নিয়োগীর সাদা আমি কালো আমি পড়ে নকশাল আন্দোলনের ঠিক বিপরীত ও নকশাল দমনে সরকারি পদক্ষেপের প্রধান বিখ্যাত/কুখ্যাত এক চরিত্রের চিন্তাধারার পরিচয়ও পেয়েছি। এ বইতে নতুন কিছু থাকবে এমন আশা করিনি তাই কেনা হয়নি। এক বছর পরে বইটা কেনা হলো ও পড়ে ফেললাম। কেমন লাগলো বলার আগে আরো কিছু কথা বলেনি। ২০০৩ সালে ৪৮ বছর বয়সে যখন মেজ জেঠু মারা যান বাবা একদিন দুঃখ করে বলেছিল " ওকে জেলে স্লো পয়জনিং করেছিল। " বাবার মনে তীব্র ঘৃণা ছিল কংগ্রেসীদের উপর। জেঠু ১৩ মাস বহরমপুর জেলে ছিলেন নকশাল করার অপরাধে। সেই ১৩ মাসে একটু একটু করে কাউকে বিষ দেওয়া তারপর ২৮-৩০ বছর পরে তার মৃত্যু। যুক্তি নয় তীব্র ঘৃণা থেকে বলা। বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম নকশাল আন্দোলন নিয়ে, বলেছিলো "ওদের লাইনটাই ভুল ছিল। খতমের লাইন। " আমি...
বইপত্রের গল্প

স্টোয়েসিজম

ছবি
  ১ আজথেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগের কথা। গ্রিস দেশের রাজধানী এথেন্সে বাণিজ্য করতে আসার পথে সাইপ্রাসের এক সওদাগরের জাহাজডুবি হয়ে গেল। জাহাজ ছিল দামী দামী মালপত্রে ঠাসা। সওদাগর সব হারালেও নিজে কোনোক্রমে বেঁচে গেলেন। বাণিজ্যের মালপত্র নেই তাই বাণিজ্যও নেই। হাতে নেই টাকা পয়সা। নেই কোনো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এমন অবস্থায় কর্মহীন হতাশ সওদাগর মনের দুঃখে এথেন্সের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে ঢুকে পড়লেন একটা বইয়ের দোকানে। পড়া শুরু করলেন বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস নিয়ে। দোকানি লোকটা ভালো। বই না কিনেও পড়তে দিলেন। একটা শেষ হতেই হাতের কাছে আরেকটা এগিয়ে দিলেন। এভাবেই পড়তে পড়তে সওদাগর সক্রেটিসের চিন্তাভাবনায় গভীর ভাবে প্রভাবিত হলেন। ভীষণ দুঃখের মাঝে যেন দিশা খুঁজে পেলেন। মুগ্ধ সওদাগর তখন দোকানীকে জিজ্ঞাসা করলেন - আচ্ছা এই সক্রেটিস লোকটাকে পাই কোথায় বলতে পারেন ? দোকানদার পড়লেন মহা বিপদে। সক্রেটিসকে তখন কোথায় পাওয়া যাবে! তিনিতো তার বহু বহু বছর আগেই মারা গিয়েছেন। সওদাগরের আগ্রহ দেখে দোকানী আঙ্গুল তুলে রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটা লোককে দেখিয়ে বললেন- দেখো বাছা সক্রেটিস তো এখন নেই। তুমি বরং ওই লোকটার সাথে কথা বোলো।...
ইতিহাসের গল্প

মামার বাড়ি

ছবি
মামারবাড়ি যেতে আমার কোনো দিনই ভালো লাগতো না। ইট পাথরের দাঁত মুখ বের করা পুরোনো একটা বাড়ি। উঁচু উঁচু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় গা ছমছম করে উঠতো। বিরাট এলাকা জুড়ে বাড়ির আশেপাশে ভেঙে পড়া ইটের স্তূপ। সেসব জায়গায় যাওয়া মানা। সাপ খোপ আছে। আর ছিল কলাবন, বাঁশবন, পুকুর, আম কাঁঠাল খেজুর তালের ঘন বাগান। এসব নিয়ে একটা সাত আট বছরের বালকের কি'বা করার থাকতে পারে। সে তখন পাড়ার ছেলেদের সাথে বিকেলে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলে মাঠে। ছুটির সকাল কেটে যায় লুকোচুরি, কুমিরড্যাঙা খেলতে খেলতে। মামার বাড়িতে এসব ছিলনা। আশেপাশে যেসব বাচ্চারা ছিল তাদের চিনতামই না। তারাও আমাদের সাথে ভিড়ত না। যতই হোক "বাবুদের বাড়ির ছেলে"! তাদের জামা কাপড় ছেঁড়া , প্যান্টুলুনে বোতাম নেই, নাক দিয়ে সিকনি গড়ায়। আর আমাদের গায়ে প্রতিদিন আলাদা আলাদা রংবেরঙের জামা। তার কোথাও ফুটিফাটা নেই। গলায় টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটিল স্টার। হাতে MRF স্টিকার দেওয়া ব্যাট। মুখে বিগ বাবল। ওদের ড্যাঙগুলি বা টিপ্পি খেলা আমরা বুঝতামনা। ওরাও আমাদের আড় চোখে দেখে এড়িয়ে যেত। সঙ্গী হতো না। বড়রা "অজাত কুজাতের" সাথে খেলতে নিষেধই করতো। আর যেটার অভাব ছিল তা হলো ...
জীবনের গল্প