পোস্টগুলি

2023 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

একটি অন্তর্ঘাতের গল্প

ছবি
পৃথিবীতে এর আগে যত আন্দোলন হয়েছে তার একটা কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সেই বিন্দু থেকে একটা ঢেউ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। কিন্তু এক জায়গায় যখন সে ঢেউ পৌঁছায় অন্য জায়গায় তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। একসাথে তামাম দুনিয়া জুড়ে এমন আন্দোলন আগে কোনোদিন হয়নি। রাষ্ট্রনেতারা প্রমাদ গুনলেন। এদের দাবী যদিও আশু রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটাচ্ছে না; কিন্তু চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে আর এমন কোনো সম্ভবনা থাকলে তা অঙ্কুরেই বিনাশ করা উচিত। আন্দোলনকারীদের দাবী যদিও আপাত নিরীহ। তাঁরা বলছেন সুন্দর ও কুৎসিত এই দুটি শব্দ অভিধান থেকে বাদ দিতে হবে। গোটা বিশ্ব জুড়ে শুধু এই নিয়েই মিটিং মিছিল। প্ল্যাকার্ড হাতে হাজার হাজার মানব মানবী। তাদের নানা ভাষা, নানা আকার, নানা বয়স।  আপাতত তাদের প্রস্তাব অন্তত দৈহিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সমস্ত সংস্কৃতিতে যে বাঁধাধরা মানদণ্ড, যে অলিখিত নিয়ম আছে তা ছুঁড়ে ফেলতে হবে। তার প্রথম পদক্ষেপ এই অভিধান থেকে শব্দদ্বয় বাদ দেওয়ার কর্মসূচি।  এমনিতে জনগণের স্মৃতিশক্তি খুব একটা প্রবল নয়। মানুষ ভুলে যায়। কেউ কেউ যদিও মনে রাখে। খুঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করতেই থাকে তারা। কিন্তু জনগণের নতুন হুজুকের প্রতি মোহ দেখে...
চিন্তার ব্যাপার বানানো গল্প

ঠাকুর দেখা অথবা অন্ধকারের গল্প

ছবি
 : ১ : -দুর্গাপুজো, কালীপুজো সব শেষ। ভাইফোঁটা গেলেই এবছরের মত উৎসব ঠাঠা।  -কে বলল, জগদ্ধাত্রী পুজো আছে তো। -সে তো চন্দননগর আর কৃষ্ণনগর। - তবু উৎসব তো। - তা বটে। তবে সে ভূমিকম্পের আফটার শকের মত। - তোমার তো উৎসব নিয়ে খুব একটা হেলদোল ছিলনা। আজ হঠাৎ? - না সে আমার আজও নেই। তবু এই এত লোক আনন্দ করছে। গান শুনছে। নতুন জামা পরছে। সাজছে। বাজি ফোটাচ্ছে তারপর একদিন ধপ করে সেই যা তাই হয়ে গেল। মানুষগুলোর সেই আগের মত কোঁচকানো কপাল, বিষণ্ন মুখ। দেখে অবাক লাগে। - আর একটু মন খারাপ খারাপ করে তাইনা? - তা একটু করে বৈকি। - হুমম। এর কোনো ওষুধ নেই। আমার মন খারাপের যদিও আরও একটা কারণ আছে। - কি কারণ? - মনে হয় সেই ছোটবেলার উন্মাদনার দিনগুলোতে আর চেষ্টা করেও ফিরতে পারব না। চেষ্টা করেও সেই আগের মত পুজো আসার আনন্দ পাবো না তাই পুজো চলে গেলে আর আগের মত দুঃখও হয়না। দুঃখটা সেখানেই। - তোমার পুজোর আনন্দ ব্যাপারটা আমি বুঝি। - কি, কি বোঝো শুনি? - না তোমার পুজো মানেই তো সেই নীল পাঞ্জাবী পরা হারগিলে ছেলেটা যে হঠাৎ কাউকে দেখে পাগল হয়ে যেত। তারপর ষষ্ঠীর রাত থেকে কালীপূজা অবধি তার আরাধনা চলত। বিয়ের পরে আর সেসব হচ্ছে না।...
জীবনের গল্প

গল্প বলার গল্প

- একটা ভালো গল্প বলো, শুনি। - এত গল্পের বই থাকতে আমার গল্প! - আহ: বলো না। আস্তে আস্তে বলো। বেশ রংচং মাখিয়ে, রসিয়ে রসিয়ে বলো তো দেখি। শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাই। - হুম, গল্প নয় তাহলে কয়েকটা সত্যি কথাই বলি।  - না সত্যি বলতে হবে না। সত্যি সবসময় শুনতে ভালো লাগে না। গল্পই বলো। - আচ্ছা শুনতে যাতে ভালো লাগে তেমন করে সত্যি কয়েকটা ঘটনা বলি শোনো। আজ যদি অনেকদিন পরে ঘটনাগুলো দেখি তবে মনেহবে কিছুই না, তুচ্ছ ব্যাপার সব। কিন্তু সেইসব দিনে এই ব্যাপারগুলো এমনভাবে ঘটে গিয়েছিল যে দিনের শেষে মনে হয় আর বোধয় জীবনটা না থাকলেও ক্ষতি নেই। যা দেখলাম, যা বুঝলাম তারপরে আর নতুন কিছু দেখার বোঝার থাকে না।  - দুঃখের গল্প? - আরে না না। শোনোই না। - সেসব দিনগুলো ছিল নতুন। গয়নার দোকান থেকে রুপোর হার কিনে আনলে দেখবে তার গায়ে একটা আস্তরণ লেগে থাকে। সেটা উজ্জ্বল নয় আবার অনুজ্জ্বলও নয়। কিন্তু সেটা দেখেই বোঝা যায় গয়নাটা নতুন। এমন নতুনের আবরণ থাকে সদ্যজাত শিশুর গায়ে। অনেকদিন অনাবৃষ্টির পর যখন প্রথম মেঘ জমে বা বেশ কয়েকদিনের দারুন বৃষ্টির পর যখন প্রথম রোদ ওঠে তখন সেই ছায়া আর আলো দিনটার গায়ে একটা নতুনত্বের আস্তরণ ফেলে দেয়।...
জীবনের গল্প

স্মৃতি

 ঃঃ এক ঃঃ ১৯৮১ সালের এক বিকেল বেলায় দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পূজো দিতে গিয়ে আমার বাবা খেয়াল করে যখনই সে ধূপকাঠি জ্বালাতে যাচ্ছে তক্ষনি দমকা হাওয়ায় আগুন নিভে যাচ্ছে  বারবার।  বহুবার চেষ্টাতেও যখন ধূপ জ্বলল না তখন পূজো  না দিয়ে অজানা দুর্ভাবনা নিয়ে উত্তরপাড়ায় ফিরে আসার পর বাবা জানতে পারে তার পিতৃবিয়োগ হয়েছে। সেখান থেকে বাবা যখন বাড়ি পৌঁছায় তখন দাদুর দাহকার্য হয়ে গিয়েছিল।  শেষবার আর দাদুকে দেখা হয়নি বাবার।  এসব আমার জন্মের প্রায় ৮ বছর আগের কথা।  একটা ছবি ছাড়া দাদুকে আমি দেখিনি। পলাশী বাজারের মধ্যে দাদুর একটা চায়ের দোকান ছিল।  সে দোকান আজও আছে।  সৎ , কর্মঠ মানুষ হিসাবে দাদুর নাকি বেশ সুনাম ছিল। লোকে মন্যি গন্যি করতো।  কষ্ট করে ভাইদের বড় করেছিল। এসব কথা যখন বাবা বলে তখন আজও তার গলা উদাস হয়ে যায়। চোখ ছলছল করে।  আমার ছোটদাদুকে যদিও আমি দেখেছিলাম।  মাথার মাঝে মস্ত টাক।  বয়সের ভারে একটু কুঁজো হয়ে গেলেও চলাফেরা করতেন যথেষ্ট। যে সময় আন্দামানে বনজঙ্গল কেটে আবাদ করা হচ্ছে  সে সময়ে ছোটদাদু ছিলেন সরকারি সার্ভে টিমের সদস্য। তার ঝুলিতে ছি...
চিন্তার ব্যাপার জীবনের গল্প

কালকা - সিমলার মাঝপথে

ছবি
১৯ শতকের শেষ দিকের কথা। সিপাহী বিদ্রোহ দমন করে কোম্পানি শাসন উঠে গিয়ে ভারতবর্ষে রানীর রাজত্ব। ইংরেজরা ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসছে। ভারতবর্ষ গরমের দেশ। এই গরমে শাসন চালিয়ে যেতে মাঝে মাঝে কিঞ্চিৎ অবসরও প্রয়োজন। প্রয়োজন ঘরোয়া আবহাওয়ায় ছুটি কাটানোর মত কিছু জায়গা যেখানে পরিপাটি করে সাজানো থাকবে শখের বাংলো। গরমে, কাজের চাপে হাপসে যাওয়া সাহেবরা বাংলোর বারান্দায় চা সহযোগে ধূমপান করতে করতে স্মৃতিতে খুঁজে পাবে তাদের ফেলে আসা দেশকে। খোঁজ শুরু হয় "হোম ওয়েদারের"। এভাবেই বিরাট ভারতবর্ষের নানা পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে ওঠে শৈলবাস। বাংলার দার্জিলিং, হিমাচলের সিমলা, ঝাড়খণ্ডের ম্যাকলস্কিগঞ্জ এমনই অবসরের শহর। এসব ছোট শহরের পৌঁছতে হয় পাহাড়ের গা বেয়ে। কিন্তু মানুষ তো তা পারে না, দরকার যানবাহন। পাহাড়ি এলাকা, সংকীর্ণ ধ্বসপ্রবন উপত্যকা। বড় আর ভারী রেলগাড়ি এখানে চলবে না। দরকার হালকা পোক্ত কিছু। একটু ধীর লয়ের হলেও ক্ষতি নেই। চলতে চলতে উপভোগ করে নেওয়া যাবে দৃশ্যপট। গড়ে ওঠে রেলপথই, তবে বড় গাড়ির নয় ছোট্ট খেলনার মত রেলগাড়ির দুফুট আড়াই ফুট চওড়া ন্যারো গেজ রেলপথ। এই ছোট রেলপথ ভারতের বহু জায়গায় তৈরি হয়েছিল। ইংরেজ ছাড়াও ত...
ইতিহাসের গল্প চিন্তার ব্যাপার বেড়ানোর গল্প

লোডশেডিংয়ের গল্প

ছবি
সেবার যখন হঠাৎ বুনো শুয়োরের মত গোওওওঙ-গোঙ শব্দ করে আমাদের পাড়ার মোড়ের ট্রান্সফর্মারটা খারাপ হয়ে গেল, এলাকাবাসী হকচকিয়ে গিয়েছিল। এমন ঘটনা আগে ঘটেনি, এমন শব্দও আগে শোনা যায়নি। আসে পাশের অনেকটা এলাকা জুড়ে একটাই ট্রান্সফর্মার। কারেন্ট কবে আসবে কে জানে। কেউ বলেছিল সাত দিন। কেউ বলেছিল মাস খানেকের আগে হতেই পারেনা। শুধু দেব দ্বিজে ও সিপিএমে যাদের অপার ভক্তি তারা বলেছিল দিন দুয়েকের মধ্যে এসে যাবে। ঠিক সাড়ে চার দিনের মাথায় একটা ৪০৭ গাড়ির পিঠে চাপিয়ে নতুন ট্রান্সফর্মার এনে লাগানোর কাজ যখন শুরু হলো পাড়ার মোড় তখন জনারণ্য। ইলেকট্রিক অফিসের লোকেরা দড়ি বেঁধে পুরোনো অক্ষম যন্ত্রটা নামাচ্ছিল। স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে এলাকার একচেটে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি গণেশ কাকু প্যান্টটা গোঁড়ালি উপর গুটিয়ে তাতে হাত লাগায়। ঘন্টা চারেকের পরিশ্রমের পরে যখন প্রতিস্থাপন শেষ হয়ে মেন সুইচ অন করার পালা তখন জনগণকে তফাৎ যেতে অনুরোধ করা হয়। কারেন্ট আসতেই সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে আর উদ্দীপনার ঢেউ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আবার ঘোওওওঙ নাদে নতুন যন্ত্রটিও দেহ রাখে।  প্রাচীনপন্থী অনেকের মতে ব্রিটিশ আমলের যন্ত্রের সঙ্গে একালের পাল্লা দিতে পারার ক...
জীবনের গল্প

ছবি

 ছবি   আঁকাবাঁকা ছোট্ট একটা নদী, টলটলে আকাশী রঙের জল তার। নদীটার উপরে একটা নৌকা ভাসে। কখনো কখনো পাল তুলে কখনো এমনিই। নদীর পারে গাছের ছায়ায় একটা কুঁড়েঘর। সেই ঘর থেকে একটা সরু পথ মিশেছে নদীতে আর দূরে আকাশে এক ঝাঁক পাখি উড়ছে সার দিয়ে। অথবা দুটো পাহাড় , পাহাড় দুটোর আড়ালে সূর্য ডুবছে। পাহাড় দুটোর সবুজ বিছানো উপত্যকায় কয়েকটা গাছপালা নিয়ে একটা বাড়ি আর বাড়িটার ঠিক দরজা থেকে একটা রাস্তা এঁকে বেঁকে চওড়া হতে হতে আঁকার খাতার কিনারায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এই ছিল ছবি। এই ছবিই বারবার এঁকেছি। আঁকার পরীক্ষা থেকে প্রতিযোগিতা যেটুকু ছবি আঁকা জানতাম তার দৌড় শেষ হতো এই দুই ছবিতেই। একবার এক প্রতিযোগিতায় ছবির বিষয় হলো বন্যা। আঁকার স্কুলের সবার সাথে আমারও নাম ছিল। সেদিন আমার ছবির ছোট্ট নদী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো , ফুঁসে উঠলো জল। তার সে আকাশী রং আর রইলোনা। গাছপালার ছায়ায় থাকা কুঁড়েঘরটা ডুবুডুবু হলো সেই পাগলা নদীর ঘোলাটে জলে। পাখিগুলো উড়লো'না আকাশে। কিন্তু এতদিন যাদের দেখা যায়নি, যাদের আমি ঘরের চার দেওয়ালের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আড়াল করে রেখেছিলাম তারা দুজন উঠেএলো কুঁড়েঘরের চালায়। চোখ আঁকতে আমি জানিনা ভাগ্যি। জানল...
বানানো গল্প

কেন সাহিত্য পড়ব

ছবি
 সাহিত্যের উদ্দেশ্য কি অর্থাৎ কোন কারণে এই গল্প কবিতা প্রবন্ধ উপন্যাস লেখা হয় তার সঠিক উত্তর আজ অবধি কোনো সাহিত্যিক, দার্শনিক দিতে পারেননি।  কোনো কোনো কবি বলেছেন কবিতার উদ্দেশ্য শুধু কবিতাই। কিন্তু সেখানেই আমাদের থেমে থাকলে তো চলে না। আমাদের ভাবতে হয়। কেন মানুষ কবিতা লেখে? কেন গল্প পড়ে? অনেকের কাছে বইপড়া একটা নেশার মত। লিটিল ম্যাগ বের করা একদল সাহিত্যিকের কাছে অনেকটা যুদ্ধ জয় করার আনন্দের কাছাকাছি।  কিন্তু এই যে সাহিত্য তা লেখা ও পড়া হয় কেন তার কথা ভাবতে গিয়ে কিছু ব্যাপার মাথায় আসে। এর যে একটা আর্থিক লাভ লোকসানের দিক আছে সেটা আসে লেখা , পড়া, ভালোলাগার পরে। তাই সেদিকে তাকানোর পূর্বে দেখতে হয় আগের কারণ গুলোকে। মনোরঞ্জন। সাহিত্য পড়ে যেমন পাঠক আনন্দ পান। লেখকেরও মনের ভার লাঘব হয়। প্রতিটা সৃষ্টিই আসে কিছু যন্ত্রণার বিনিময়ে। টুক করে কোনো সৃষ্টিশীল কাজ হয় না। তার অল্প হলেও প্রস্তুতি লাগে। তাই একটা লেখা লেখার আগে লেখককে এই প্রস্তুতি পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাকে ভাবতে হয় কি লিখব, কেনই'বা লিখব। তারপর শিশুর মত জন্ম নেয় একটা কবিতা, গল্প এমনকি প্রবন্ধও। পাঠকের হাতে সেই সাহিত্যকর্ম ...
চিন্তার ব্যাপার বইপত্রের গল্প

বাংলায় বর্গী হানা ও পলাশীর কিছু পুরনো কথা

ছবি
এ ইতিহাস পলাশীর যুদ্ধের থেকেও প্রাচীন। বাংলার মসনদে তখন সিরাজের দাদু আলীবর্দী খান।  নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান রঘুনন্দন মিত্র চলেছেন মুর্শিদাবাদ দরবারে। সঙ্গে কয়েক লক্ষ টাকা; নানা উপঢৌকন। নবাবের কাছে বার্ষিক খাজনা দিতে হবে। বিন্দুমাত্র দেরি হওয়ার জো নেই। ঠিক সময়ে না পৌঁছালে বড়সর বিপত্তি। প্রজাপালক হিসাবে অলিবর্দীর খুব নামডাক কিন্তু শাসক হিসাবে তিনি কড়া। একটু বেশিই কড়া। খাজনা দিতে দেরি হলে বা দেয় খাজনায় কোনোরকম অসঙ্গতি থাকলে নির্মম ভাবে হত্যা করতে তাঁর হাত কাঁপে না। অত্যাচারের বিভিন্ন পন্থা আছে। আম জনতার সামনে চরম হেনস্থা করে বিষ্ঠার পুকুরে ডুবিয়ে মারা হয়।  যদিও রঘুনন্দন আঁটঘাট বেঁধে, পর্যাপ্ত সময় নিয়েই বেড়িয়েছেন কিন্তু পথের কথা কে বলতে পারে। নদীয়ার গ্রামের পর গ্রাম পার হয়ে মুর্শিদাবাদের প্রায় উপকণ্ঠে পৌঁছেছেন তিনি। এবারে পার করবেন নদীয়ার শেষ গ্রাম পলাশী। রঘুনন্দন কিছুটা নিশ্চিন্ত। মুর্শিদাবাদ জেলায় ঢোকার পরে নবাব-দরবারে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।  এমন সময় দূরে দেখা গেল কালো মেঘের মত একদল অশ্বারোহী। শ্রান্ত সৈনিকেরা নড়ে চড়ে উঠল। কিন্ত তারা বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার...
ইতিহাসের গল্প

একটি যাচ্ছেতাই গুল্প

ছবি
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হলো আজকের দিনটা নষ্ট হয়ে যাবে যদি একটা ভালো গল্প পড়তে না পাই। এভাবে শুরুতেই দিনের উপর একটা সিদ্ধান্ত দেগে দিতে খারাপই লাগল কিন্তু কিছুতেই মন থেকে চিন্তাটা বের করতে পারলাম না। বই আমি অনেকই পড়ি কিন্তু আমার কাছে বই তেমন থাকে না। আজকাল বইয়ের যা দাম, আমার তুচ্ছ পকেট মানিতে তা কুলোয় না। যাও বা একটা অধটা কিনে ফেলি তা ঠিক কারোর না কারোর পছন্দ হয়ে যায়। তারপর বই ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়ার সেই পুরোনো প্রথার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে। আজকাল তাই দু একটা যা কিনে ফেলতে পারি তা কিনে কিনেই ফ্রিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখি। ফ্রিজটার শেষ থাকের নীচে সবজি রাখবার একটা প্লাস্টিকের মুখ খোলা বাক্স আছে। সে বাক্সে বাকি সবার বাড়িতে তরি-তরকারি থাকে। আমাদের বাড়িতে বই। সবজি আমি প্রতিদিন বাজার করে অনি। ফ্রেশ।  ফ্রিজে তিনটে বই ছিল। দুটো গল্পের। এবছরই বইমেলায় কেনা। তার একটা বের করে বালিশের নীচে রেখে দিলাম গরম হওয়ার জন্য। ততক্ষনে বাজারটা হয়ে যাবে। ২. বাজার করে ফেরার পথে হঠাৎ ধ্রুবর সাথে দেখা। দেখেই বলে - ভাই আমার একটা ছোট্ট কাজ করে দিবি? ধ্রুবর সব কাজই ছোট কাজ। হ্যাঁ, না'য়ের অপেক্ষা না করেই পকেট থ...
বানানো গল্প

ফুটপাথের দোকান - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

ছবি
গত দুচার বছরে পত্রভারতী প্রকাশনী থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নানা লেখা কুড়িয়ে বাড়িয়ে বেশ কয়েকটা বই প্রকাশিত হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া লেখা, সিন্দুক খুললেই চল্লিশ ইত্যাদি। ফুটপাতের দোকান সেই ধরনের বইগুলোর মধ্যে একটা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখার এক অমোঘ টান আছে। মিঠে শব্দের নিজস্ব অভিধান আর মন জুড়িয়ে দেওয়া বাক্যের একটা স্বতন্ত্র ব্যাকরণ যেন তাঁর হাতে রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যারা ওনার লেখা পড়েছেন তাদের কাছে ব্যাপারটা কমন। এই বইটিও পড়তে তাই মন্দ লাগেনা। মনোহারী দোকানের হরেক জিনিসের পশরার মত নানা ধরনের লেখা দিয়ে এই বই সাজানো। কিন্তু অন্তত আমার কাছে কয়েকটি মাত্র লেখা বাদে আর কোনো লেখাতেই নতুনত্ব কিছু নেই। নতুনত্ব অর্থাৎ সেই সব কথা যা এখনও অবধি শীর্ষেন্দু তার কোনো রচনাতেই বলেননি। এমন হতেই পারে। সব লেখাতেই নতুন কিছু বলার থাকবে এমন আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু যে লেখক ট্যাংকিসাফের মত গল্প, ঘুণপোকার মত উপন্যাস লিখেছেন তাঁর কাছে পাঠকের আবদার একটু বেড়েই যায়। এই বইটিতে বিমল কর ও তাঁর সাহিত্য নিয়ে একটি সুন্দর প্রতিবেদন আছে। আর আছে চানাচুরতন্ত্র নামে একটি মুক্তগদ্য। আমার মত পাঠকের কাছে ...
বইপত্রের গল্প

লকডাউন

  ১ জানলার সামনে ঠিক দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে একটা বুড়ো পায়রা এসে বসে। তার পালকগুলো অগোছালো। কোথাও কোথাও উঠেও গিয়েছে। শীর্ণ দেহ। দেখে মনে হয় সে বহু যুদ্ধের ক্লান্ত সৈনিক। এতদিন খেয়াল করিনি। এ সময়ে অফিসে থাকি। শনি রবিবার সময়টা চলে যায় হয় ঘুম নাহলে খাওয়া অথবা কম্পিউটার ঘাঁটতে ঘাঁটতে। ফ্ল্যাটের ব্যালকনি তে দাঁড়ালে সারি দিয়ে দেখা যায় এই এলাকার অন্যান্য আবাসন গুলো। কখনো কখনো দেখি আমার মতোই বন্দী মানুষেরা গ্রিলের উপর হাত রেখে বড় উদাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। গরম পড়েছে। ভীষণ গরম। কিন্তু এদেশে তো বৈশাখ মাস নেই তাই কালবৈশাখী হয়না। সূর্য ডোবে দেরিতে। ছটার পর ছাদে উঠলে স্নেহ মমতা মেশানো হাওয়া বয়। ওখানেই আমাদের পিজির বাকি বোর্ডারদের সাথে গল্প, কখনো গান , বাড়ি থেকে অফিসের কাজ আর ভাইরাস নিয়ে আলোচনা। এ আলোচনা একসময় থেমেও যায়। ছাদের উঁচু কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে দূরে চেয়ে থাকে কয়েকজন । ছোট্ট স্পিকার এনে কখনো গান চালানো হয়। কেউ কেউ লোহার মই বয়ে জলের ট্যাঙ্কির কাছে পৌঁছে যায়। ছাদ জুড়ে চলতে থাকে পায়চারি। ঠিক এমন সময় লাল হতে হতে টুক করে সূর্য ডুবে যায়। অন্য দিকে জলছবির মতো আবছা উঁকি দেয় নিষ্প্রভ চাঁদ। এ এক প্রায় বিচ...
চিন্তার ব্যাপার জীবনের গল্প

ঠিক সিনেমার গল্প

  ১ কলকাতা থেকে শ দেড়েক কিলোমিটার দূরে NH - ৩৪ এর উপর এই গ্রাম। কাছেই স্টেশন আর মেন্ রাস্তার বাস স্টপেজ থাকায় আশেপাশের এলাকার থেকে একটু গমগমে। আবার ইতিহাসের পাতায় এই এলাকার নামও আছে। তবে বেড়ানোর জায়গা একে বলা যায়না। তেমন দ্রষ্টব্যঃ কিছু তো নেই। ইতিহাসে নাম থাকলেও সে ইতিহাস বড় সুখের নয়। তাই তাকে বাঁচারনোর তাগিদও কম। তবু শীতের শুরু থেকে বসন্তের শেষ অবধি এখানে পরিযায়ী মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। নদীয়া মুর্শিদাবাদ ভ্রমণের ফাঁকে যাদের হাতে কিছুটা বেশি সময় থাকে, তেমন কৌতূহলী মানুষেরা এখানে এক বেলা কাটিয়ে যায়। অন্য সময় কলকাতায় চাকরিজীবী যারা কালেভদ্রে দেশের বাড়ি দর্শন করতে আসতো তারাও প্রায় প্রতি সপ্তাহে একবার করে বাড়ি ফিরে আসে। আর আসে পিকনিক পার্টি। রীতিমতো গাড়ি ভাড়া করে , বাসন কোসন , বক্সস্পিকার এনে , রেঁধে বেড়ে , ব্যাটমিন্টন খেলে হৈ হুল্লোড় করতে। আমি এই এলাকারই ছেলে। মাস্টার ডিগ্রি পাশ দিয়ে এখন দু চারটে টিউশন করি। সারা দিনে চার পাঁচ ঘন্টা পড়ানোর পর অখণ্ড অবসর। তবে এই সময় আমার চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। বন্ধুরা কলকাতা থেকে ফিরলে দফায় দফায় তাদের সাথে চায়ের আড্ডা চলে। কখনো ঘুরতেও বেরোতে হয়। স...
বানানো গল্প

নীলা (১)

নীলাকে আমার ভালোলাগে। নীলাকে ভালোলাগে শুধু এই জন্যে নয় যে নীল রং আমার ভীষণ প্রিয় আর নীলার নামে সে রঙের রেশ পাওয়া যায়। বরং নীলাকে ভালোলাগার যে অকারণগুলো আছে এটি তার একটা। নীলাকে দেখলে আমি একটা সিগারেট ধরাই। সিগারেট আমি খাই না। পকেটে রাখি। নীলকে দেখলেই আমার নিজেকে খুবই হালকা লাগে। যে কেউ তখন আমাকে এক ফুঁ'য়ে উড়িয়ে দিতে পারে। দু আঙুলের ফাঁকে সিগারেট থাকলে পুরুষদের ব্যক্তিত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। তখন আর তাকে হেলাফেলা করা যায়না। আমি জানি নীলাও আমাকে দেখে। নিশ্চয় দেখে। নীল পাঞ্জাবি , হাতে জ্বলন্ত সিগারেট , গালে দিন চারেকের না কাটা দাড়ি, চোখে চৌকো কালো ফ্রেমের চশমা। এমন ছেলেকে সহজে এড়ানো যাই কি? আমি আয়নায় দেখেছি। বাহ বেশ বেশ লাগছে তো। নীলা নিশ্চয়ই দেখে। কিন্তু নীলার চোখের দিকে আমি আজও সরাসরি তাকাইনি। অঞ্জলি দেওয়ার সময় যখন নীলা চোখ বন্ধ করে ঠাকুরকে নম করে। তারপর ঠোঁট দুটো মৃদু কাঁপিয়ে নমস্তুতে বলে ফুল ছুঁড়ে দেয়। তখন আমি দেখেছি নীলার প্রতিটা অস্ফুট মন্ত্রোচ্চারণের সাথে সাথে আলিপুরের অকাল বর্ষণের পূর্বাভাস মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে। তারপর প্রসাদ বিতরণের সময় আসে। একেক করে সবার নাম ডেকে ভীষণ ব্যস্ত ব্যস্...
বানানো গল্প

মায়াচর

ছবি
 ১ . ছোটবেলায় ঠাকুমা যখন বেঁচে ছিল তখন আমাদের বাড়ি আত্মীয় স্বজনদের আনাগোনা ছিল খুব। তারা সবাই যে খুব নিকট আত্মীয় তা নয়। দূরসম্পর্কের আত্মীয়রাও নির্দ্বিধায় ঠাকুমার সাথে দেখা করতে আসত। এসে দু চারদিন থেকে যাওয়ারই নিয়ম ছিল। আজ এসে কাল চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক নজরে দেখাও হতো না। কেউ যেতেও দিত না। তখন মোবাইলের যুগ নয়। পাড়ার কোনো কোনো বড়লোকদের বাড়িতে হয়ত একটা ল্যান্ডফোন থাকত। তাতে লাইন পাওয়াও দুষ্কর ব্যাপার। যে সমস্ত অতিথিরা আসতেন তদের কেউ কেউ হয়ত আগে থেকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিতেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই চিঠি সঠিক সময়ে এসে পৌঁছাত না। তাই আমাদের কাছে তাদের আকস্মিক আগমনই ঘটত। এখন যুগ বদলেছে। অপ্রয়োজনে সহজে কেউ কারোর বাড়ি যায়না। গিয়ে থাকার তো প্রশ্নই নেই। আর যাওয়ার আগে তিথি নক্ষত্র জানিয়ে দেওয়াই বর্তমানের দস্তুর। এ ব্যাপারটা ভালোই। গৃহস্বামীকে বিব্রত হতে হয়না। দু চার ঘণ্টায় প্রয়োজনীয় আলাপচারিতা দিব্যি সেরে নেওয়া যায়। সেই ফাঁকে অল্প স্ন্যাকস। বড়জোর লাঞ্চ। তারপর সৌজন্য বিনিময় শেষে ঘরে ফেরার পালা। আমি আজকালকার এই নিয়মকে একটু নিজের মত ভেঙে নিয়েছি। কারোর সাথে দেখা করতে গেলে পারতপক্ষে তাকে জানাই না। হঠাৎ...
বানানো গল্প

বুদ্ধ এবং

ছবি
ভূপতিত ,আহত পাখিটাকে পরম স্নেহে হাতে তুলে নিলেন কুমার সিদ্ধার্থ তারপর সেবা শুশ্রূষায় তাকে সুস্থ করে তুললেন । সিদ্ধার্থের কোলে পাখিটাকে দেখার পর তীরন্দাজের দাবি- একে তীর মেরে নামিয়েছি আমি অতএব এ পাখি আমার। সিদ্ধার্থ বললেন তুমি পাখিটাকে মারতে চেয়েছিলে, যদি মারা যেত তবে মৃত পাখির উপর নিঃসন্দেহে তোমার অধিকার থাকতো কিন্তু আমি এর প্রাণ বাঁচিয়েছি তাই জীবিত পাখির উপর আমার অধিকার। এ যুক্তি খণ্ডাতে পারলেননা বিচারকও। হার হল তীরন্দাজ দেবদত্তের। গৌতম বুদ্ধের জীবনের সব থেকে আলোচিত ঘটনা বোধয় এটাই। আমরা আমাদের পাঠ্য বইয়েও পড়েছি। এই কাহিনীর শেষ কিন্তু এখানে হয়নি, বরং এ কাহিনী জন্ম দিয়েছিলো আজ থেকে প্রায় দুহাজার পাঁচশো বছর আগের এক সাম্রাজ্যের বিরাট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ।
ইতিহাসের গল্প

তক্কোগুলি, চরিতাবলী ও আখ্যানসমূহ (লেখক - কল্লোল )

ছবি
  আমার মনে হয় পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখতে গেলে নিজেকে বই , বইয়ের চরিত্র , লেখক ও ঘটনার থেকে একটু নিরোপেক্ষ আসনে বসাতে হয়। ধরুন একটা বই বেরুলো আর আপনি হামলে পড়লেন। আপনার প্রিয় লেখকের বই হতেই পারে। কিন্তু লেখা পড়ে হতাশ হলেন। প্রতিক্রিয়ায় তখন আপনার হতাশা ফুটে উঠবে মাত্রাতিরিক্ত। বইটা ভালো লেগে গেলে তেমনই মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছাস দেখা দেবে আপনার প্রতিক্রিয়ায়। এই আধিক্য কাম্য কখনোই নয় কিন্তু আবেগকে সামলাবেন কি করে? কোনো ক্লাস নিতে বসিনি। আসলে আজকের এই লেখাও আধিক্য দোষে দুষ্ট হতে পারে তাই আগে থেকে বলে রাখলুম আরকি। কল্লোল বাবুর "কারাগার বধ্যভূমি ও স্মৃতিকথকতা" আগেই পড়েছিলাম। কেমন লেগেছিলো তা এর আগে একটা পোস্টে জানিয়েছি। "তক্কোগুলি, চরিতাবলী ও আখ্যানসমূহ" তার পরবর্তী গ্রন্থ। এক্সপেক্টেশন ছিলো কিন্তু তবু এক্সপেক্টেশনজনিত আবেগচ্ছাস সরিয়ে রেখে পড়তে শুরু করে দেখলাম এক অন্য আবেগ এসে মিশে যাচ্ছে। গল্প শুনেছেন? দাদু ঠাকুমার মুখে গল্প , বন্ধুর মুখে তার জগৎ জয় করা কীর্তির গল্প বা কোনো দুঃখী মানুষের দুঃখের উপাখ্যান। পাতা উল্টে পড়তে হয়না , শুধু শুনে যেতে হয়। ভালো করে শুনলে দেখবেন চোখের সা...
বইপত্রের গল্প